শিব শক্তি পরা শক্তি এক রহস্য
### **শিব মন্দিরের অদ্ভুত রহস্য**
#### **প্রথম অধ্যায়: স্বপ্নের সূত্রপাত**
এক গভীর রাত, নির্জন পরিবেশে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রবাল এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে। সে দেখে, একটি পুরনো শিব মন্দির, যার ছাদ ভাঙা এবং সেই ছাদে প্রকাণ্ড একটি বট গাছ গজিয়ে উঠেছে। সেই গাছটির শিকড়-পাতা মন্দিরের ছাদ এবং দেয়াল ফুঁড়ে বিশাল আকার নিয়েছে। চারপাশে গাছের ছায়ায় মন্দিরটি যেন আরও রহস্যময় হয়ে উঠেছে।
প্রবাল মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করার জন্য এগিয়ে যায়। সে দেখল, মন্দিরের সামনের একটি বিশাল ষাঁড় তার দিকে ছুটে আসছে। প্রবাল প্রাণপণে দৌড়ানোর চেষ্টা করে, আর তখনই হঠাৎ করে তার ঘুম ভেঙে যায়।
রাতের অন্ধকারে বিছানায় বসে সে তার শ্বাস গুছিয়ে নেয়। স্বপ্নটি অদ্ভুত হলেও, প্রবালের মনে হয় যেন এই মন্দিরের সঙ্গে তার পুরনো কোনো সংযোগ রয়েছে। সকালে উঠে সে সিদ্ধান্ত নেয়, সে মন্দিরটির আসল রহস্য বের করতে যাবে।
#### **দ্বিতীয় অধ্যায়: যাত্রা শুরু**
পরদিন ভোরেই প্রবাল সেই মন্দিরের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। সে তার পিতামহের কাছ থেকে শুনেছিল যে, গ্রামের উত্তরদিকে একটি পুরনো শিব মন্দির ছিল, যেখানে কোনো মানুষ যাওয়ার সাহস করত না। গ্রামে কথিত ছিল যে, মন্দিরটির সাথে কোন এক অলৌকিক শক্তির যোগ রয়েছে এবং সেখানে রাতের বেলায় কেউ গেলে নানা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়।
প্রবাল পিতামহের কাছে পৌঁছে মন্দিরটির বিস্তারিত জানতে চায়। তার পিতামহ বলেন, "ওই মন্দিরে অনেক বছর আগে এক তান্ত্রিক থাকতেন, যিনি শিবভক্ত ছিলেন। বলা হয়, তিনি মৃত্যুর পরেও মন্দিরে অবস্থান করেন। তাঁর আত্মা এখনও সেখানে ভক্তদের পরীক্ষা নেয়।"
প্রবালকে ওইসব কথাগুলো একটু ভয় লাগালেও, তার মনে একটি অদম্য ইচ্ছা জন্মাল, মন্দিরের আসল রহস্য বের করার।
#### **তৃতীয় অধ্যায়: পুরনো মন্দিরের সন্ধান**
গ্রামের মানুষদের প্রশ্ন করে প্রবাল জানতে পারে, মন্দিরটি উত্তর-পশ্চিম দিকে জঙ্গলের গভীরে অবস্থিত। পরদিন সকালে এক ব্যাগে কিছু খাবার ও পানি নিয়ে প্রবাল জঙ্গলের পথে রওনা দিল। রাস্তা সংকীর্ণ এবং গাছপালায় ভরা। সূর্যের আলো এখানে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। একটু একটু করে প্রবাল জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করল।
অনেকক্ষণ হাঁটার পর প্রবাল হঠাৎ দেখতে পেল সেই পুরনো শিব মন্দির। ভাঙা ছাদ, বট গাছের শিকড় মন্দিরের ভিতর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে, ঠিক স্বপ্নে যেমন দেখেছিল। মন্দিরটির দেয়ালগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত এবং ঝুঁকে পড়েছে। প্রবাল মন্দিরটির দিকে এগিয়ে গেল, মনে হল যেন একটা অদৃশ্য শক্তি তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
#### **চতুর্থ অধ্যায়: অদ্ভুত অভিজ্ঞতা**
প্রবাল মন্দিরের কাছাকাছি যেতেই একটি ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেল। হঠাৎ করেই মন্দিরের চারপাশে কিছু অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যেতে লাগল। প্রবাল মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করার আগে চারপাশে তাকাল। তার মন বারবার বলছিল, সে যেন এখান থেকে সরে যায়। কিন্তু প্রবালের মনে রহস্যের জাল আরও গভীর হতে লাগল।
মন্দিরের দরজা খোলা ছিল। প্রবাল ধীরে ধীরে ভিতরে প্রবেশ করল। সেখানে সে এক বিশাল শিবলিঙ্গ দেখতে পেল, যার চারপাশে পূজা করার নানা সামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। সে দেখতে পেল, মন্দিরের দেয়ালে কিছু প্রাচীন মূর্তি খোদাই করা আছে এবং সেইসব মূর্তি যেন জীবন্ত হয়ে ওঠার অপেক্ষায় আছে।
হঠাৎ করেই প্রবালের মনে হল যেন কেউ তাকে দেখছে। সে পেছনে ফিরে তাকাল এবং দেখল, সেই বিশাল ষাঁড় মন্দিরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। ষাঁড়টি তার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগল। প্রবাল ভয়ে জমে গেল। এই পরিস্থিতিতে সে কী করবে, তা সে কিছুতেই ভাবতে পারছিল না।
#### **পঞ্চম অধ্যায়: প্রাচীন আত্মার উপস্থিতি**
ষাঁড়টি যখন প্রবালের একদম কাছে এসে পড়ে, তখন প্রবাল ভয়ে চিৎকার করে উঠে মন্দিরের এক কোণে সরে গেল। হঠাৎ করেই মন্দিরের ভিতরে এক অদ্ভুত আলো জ্বলে উঠল এবং প্রবাল দেখতে পেল, সেই আলো থেকে একজন প্রাচীন বয়স্ক ব্যক্তি আবির্ভূত হলেন। তিনি প্রবালের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন।
প্রবাল ভয়ে কাঁপছিল। বৃদ্ধ ব্যক্তি ধীরে ধীরে বললেন, "ভয় পেও না, প্রবাল। আমি এই মন্দিরের প্রহরী। তুমি এই মন্দিরের প্রকৃত রহস্য জানতে চাও?"
প্রবাল সম্মতি জানিয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমি জানতে চাই। এই মন্দির এবং আপনার সাথে যুক্ত সমস্ত কিছু জানার ইচ্ছা আছে আমার।”
#### **ষষ্ঠ অধ্যায়: মন্দিরের আসল রহস্য**
বৃদ্ধ ব্যক্তি জানান, “অনেক বছর আগে এই মন্দিরে আমি পূজা করতাম। আমি শিবের এমন একজন ভক্ত ছিলাম যে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলাম শিবের সাধনায়। আমার এই শিবলিঙ্গের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল। একদিন আমার মৃত্যুর সময় এলো, আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, যতদিন না এই মন্দিরের প্রতি শ্রদ্ধা ফেরত আসবে, ততদিন আমি এই মন্দিরের প্রহরী হয়ে থাকব।”
“কিন্তু বহু বছর পর মানুষ মন্দিরটি ভুলে গিয়েছে। এখন এখানে শুধুমাত্র অশুভ শক্তিরা প্রবেশ করতে আসে, এবং তারা চেষ্টা করে এই মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করতে। তুমি যদি সত্যি এই মন্দিরের রহস্য বুঝতে চাও, তবে তোমাকে এই মন্দিরের পবিত্রতা পুনরুদ্ধার করতে হবে।”
#### **সপ্তম অধ্যায়: প্রবালের প্রতিজ্ঞা**
প্রবাল মন্দিরের প্রহরীর কথা শুনে প্রতিজ্ঞা করল, সে এই মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষা করবে। বৃদ্ধ ব্যক্তিটি প্রবালের হাতে একটি শঙ্খ তুলে দিয়ে বললেন, "এই শঙ্খের মাধ্যমে তুমি মন্দিরের অশুভ শক্তিকে দূর করতে পারবে।"
প্রবাল প্রহরীর কথামতো শঙ্খটি নিয়ে মন্দিরের চারপাশে ঘুরে ঘুরে মন্ত্র পাঠ করতে শুরু করল। প্রাচীন মন্ত্রের ধ্বনিতে মন্দিরের পরিবেশ পাল্টে যেতে লাগল। তার চারপাশে আলো ঝলমল করতে লাগল এবং সমস্ত অশুভ শক্তি যেন তাড়িয়ে দেওয়া হলো।
#### **অষ্টম অধ্যায়: শান্তির প্রত্যাবর্তন**
মন্ত্রোচ্চারণ শেষ হওয়ার সাথে সাথে মন্দিরে এক প্রশান্তি নেমে এলো। বৃদ্ধ প্রহরী প্রবালের দিকে তাকিয়ে বললেন, "তুমি এই মন্দিরের প্রকৃত রক্ষাকর্তা হয়ে উঠেছো। এই মন্দিরকে তুমি আবার জীবন্ত করেছো। এবার আমি মুক্তি পেলাম।”
এই বলে প্রহরী ধীরে ধীরে আলো হয়ে মিলিয়ে গেলেন। প্রবাল অনুভব করল, সে একটি বড় দায়িত্ব পালন করেছে। সে অনুভব করল, এই মন্দির শুধু একটি পুরনো স্থাপনা নয়, এটি বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং অতীতের স্মৃতি বহন করে।
#### **উপসংহার: রহস্যের সমাপ্তি**
প্রবাল গ্রামে ফিরে গিয়ে সবাইকে মন্দিরের রহস্য জানাল। গ্রামবাসীরা সেই মন্দিরে ফিরে আসতে লাগল, এবং আবার পূজা শুরু করল। প্রবাল জানত, এই মন্দির তাকে এক অলৌকিক অভিজ্ঞতা দিয়েছে এবং তার জীবনে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।
প্রবাল বুঝতে পারল, এই পৃথিবীতে সবকিছুর পিছনে একটি শক্তি কাজ করে, যা আমাদের কাছে কখনো রহস্যময় হয়ে থাকে। কিন্তু সেই রহস্যের গভীরে থাকে আমাদের বিশ্বাস এবং আস্থা, যা কখনো মুছে যায় না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন